Popular Articles

Coronavirus ওজন কমানোর উপায় করোনা ভাইরাস করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় কোন সময়ে শিশুর কোন টিকা দিতে হয় ক্যানসার ক্যান্সার রোধে তেঁতুল অপ্রতিরোধ্য খাদ্য ও পুষ্টি খুশকি ও চুল পড়া খেজুরের ঔষধি গুণাগুণ চুল পড়া সমস্যা চুল পড়া সমস্যা চিকিৎসা নিয়ে বিভ্রান্তি জিমে না গিয়ে ওজন কমান ডায়রিয়া দুপুরে ঘুমের শক্তি পান খেলে যে ১০ টি অসুখ ভালো হয় পেট ফাঁপা ও বদহজম থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় প্রতিদিন পান খেলে কী হয় প্রাকৃতিক চিকিৎসা ফুলকপির গুনাগুন ফ্রিজে কাঁচা ডিম রাখলে কি হয় ! বাঁধাকপির গুণাগুণ বাংলাদেশী সবজির ঔষধি গুণ মুরগির না হাঁসের ডিম কোনটি ভালো? যোগব্যায়াম যোগব্যায়াম কেন করবেন? লিভার রোগ থেকে মুক্তির উপায় লিভার রোগের লক্ষণ শিশু'র টিকা শিশুদের ডায়রিয়ায় কী করবেন? শীতকালীন সর্দি-কাশি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় ! সুস্বাস্থের জন্য লবণ স্তন ক্যানসার স্তন ক্যানসার নির্ণয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি স্তন ক্যান্সারঃ কারণ ও চিকিৎসা স্বাস্থ্য মানে কী ? স্বাস্থ্য সংবাদ হার্ট এ্যাটাক কাদের বেশী হয়

স্তন ক্যান্সারঃ কারণ ও চিকিৎসা




মহিলাদের স্তন গঠিত হয় অনেকগুলো লবিউলস বা লতি দিয়ে যার ভেতরে থাকে গস্নান্ডস ( যা দুধ তৈরী করে), ডাক্টস (ছোট ছোট নালী) যেগুলো লবিউল থেকে দুধ বহন করে স্তনের বোঁটায় নিয়ে যায়, চর্বি, সংযোগকারী টিস্যু, রক্তনালী, লসিকা নালী ইত্যাদি দ্বারা। একজন মহিলার দুই স্তনের আকারের তারতম্য হওয়া খুবই স্বাভাবিক। স্তনের একটা অংশ বগলের নিচে পর্যন্ত চলে যায়।

স্তন ক্যান্সার কি?

শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠিত হয় খুব ছোট ছোট জীবকোষ দ্বারা। ক্যান্সার এইসব জীবকোষের রোগ। স্বাভাবিকভাবে জীবকোষের বিভাজন ঘটে সুশৃঙ্খল ও নিয়ন্ত্রিত উপায়ে। যদি কোনো কারণে এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাহলে জীবকোষগুলি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিভক্ত হতে থাকে এবং একটা পিণ্ড সৃষ্টি করে থাকে, যাকে বলা হয় টিউমার। দুই ধরনের টিউমার হতে পারেঃ


বিনাইনঃ বেশীরভাগ স্তন টিউমার বিনাইন হয় যা ক্ষতিকর নয়। কিছু বিনাইন টিউমার স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

ম্যালিগন্যান্টঃ ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের মধ্যে এমন ধরনের ক্যান্সার জীবকোষ থাকে যা চিকিৎসা না করা হলে স্তনের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো রক্তপ্রবাহ কিংবা লসিকার মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এইসব জীবকোষ নতুন এলাকায় পৌছে নতুন টিউমার সৃষ্টি করতে পারে। এই নতুন টিউমারকে বলা হয় মেটাস্ট্যাটিক টিউমার।

প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে স্তনের ক্যান্সার সারানো যায়। তবে ক্যান্সার যদি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে সাধারণতঃ তা সারানো যায় না, কিন্তু রোগটিকে সিচিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায়। পশ্চিমা বিশ্বে মহিলাদের ক্যান্সারের মধ্যে স্তন ক্যান্সারই সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। তবে আমাদের দেশে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের পর স্তন ক্যান্সারের অবস্থান।

স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ কি?

স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণগুলি এখনও সম্পূর্ণভাবে বোঝা যায়নি। কিছু মহিলার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তাদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশী। মহিলাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তনের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি

জেনেটিক রিস্ক ফ্যাক্টর

স্তন ক্যান্সার হওয়ার একটি কারণ হলো উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ক্রটিযুক্ত ‘জিন’। যেসব অস্বাভাবিক জিন স্তনের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায় তাদের মধ্যে আছে ইজঈঅ১ এবং ইজঈঅ২ জিন।

পারিবারিক ইতিহাস

০ একই পরিবারের দুই বা তার বেশি নিকট আত্মীয়ের স্তনের ক্যান্সার।

০ একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অন্যান্য ক্যান্সার, বিশেষ করে, মলাশয় ও ভ্রম্নণকোষের ক্যান্সার, সেই সাথে স্তনের ক্যান্সার।

০ ৪০ বছরের কম বয়সী একজন নিকট আত্মীয়ের স্তনের ক্যান্সার।

০ স্তনের ক্যান্সারের আক্রান্ত এমন একজন আত্মীয় যার দুই স্তনেই এই রোগ হয়েছে।

ব্যক্তিগত ইতিহাস

যেসব মহিলার এক স্তনে ক্যান্সার হয়েছে তাদের জন্য স্তনে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

জাতি

শ্বেতাঙ্গ মহিলাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা এশিয়ান বা আফ্রিকান মহিলাদের চেয়ে বেশি।

অন্যান্য ঝুঁকি

১· সন্তানহীনতা বা বেশি বয়সে সন্তান হওয়া।

২· খুব অল্প বয়সেই ঋতুস্রাব শুরু হওয়া কিংবা ঋতুবন্ধ বেশি বয়সে হওয়া।

৩· গর্ভনিরোধক বড়ি ব্যবহার। যারা ১০ বছরের বেশি সময় আগে বড়ি খাওয়া বন্ধ করেছেন তাদের বেলায় সম্ভবত ঝুঁকি নেই।

৪· হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপী।

৫· শিশুকে বুকের দুধ পান না করানো।

৬· অ্যালকোহল ব্যবহার।

৭· স্থূলতা, অধিক চর্বি জাতীয় খাবার এবং শারীরিক কর্মহীনতা।

ক্যান্সার সংক্রামক রোগ নয় এবং একজনের রোগ আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই।

এই রোগের লক্ষণ কি কি?

অধিকাংশ মহিলার ক্ষেত্রেই স্তনের ক্যান্সার প্রথম লক্ষ্য করা যায় স্তনে একটা বেদনাহীন পিন্ডের আকারে। তবে অন্যান্য কিছু লক্ষণ সম্পর্কেও সচেতন থাকা দরকারঃ

০ স্তনের আকার বা আকৃতিতে পরিবর্তন।

০ স্তনের ত্বকে টোল পড়া।

০ স্তনে একটা পিন্ড বা স্ফীতি দেখা দেওয়া।

০ স্তনের বোঁটার পরিবর্তন (ভিতর দিকে ঢুকে যায়)

০ স্তনের বোঁটা থেকে রক্তসহ তরণ পদার্থের ক্ষরণ।

০ স্তনের বোঁটায় বা তার চারপাশে চুলকানির মতো হওয়া।

০ বগলের লসিকা গ্রন্থিগুলির স্ফীতি।

স্তনের ক্যান্সারের অস্তিত্ব ধরা যায় কিভাবে?

অধিকাংশ মহিলাই প্রথমে তাদের পারিবারিক ডাক্তার অথবা মহিলা বিষয়ক ডাক্তারের কাছে যান। তারা আপনার শারীরিক পরীক্ষা করবেন এবং প্রয়োজনে অন্যান্য পরীক্ষা করানোর অথবা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাওয়া পরামর্শ দিবেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার প্রয়োজনে নিম্নের পরীক্ষাগুলো করতে পরামর্শ দিতে পারেন।

১· ম্যামোগ্রাম

২· আল্ট্রাসনোগ্রাম

৩· ফাইন নীডল অ্যাম্পিরেশন সাইটোলজি

৪· নীডল (কোর) বাইয়োঞ্ঝী

৫· এক্সিসন বাইয়োঞ্ঝী

৬· রক্ত পরীক্ষা।

অন্যান্য কিছু পরীক্ষা

উপরোক্ত পরীক্ষায় যদি দেখা যায় যে আপনার স্তন ক্যান্সার হয়েছে তাহলে আপনার ডাক্তার হয়তো আরো কিছু পরীক্ষা করে দেখতে চাইবেন ক্যান্সার শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছে কিনা। পরীক্ষাগুলো হলো-

১· লিভার আল্ট্রাসাইন্ড স্ক্যান

২· হাডের স্ক্যান

৩· সিটি স্ক্যান

৪· এমআরআই স্ক্যান

৫· পিইটি স্ক্যান।


প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার সনাক্তকরণ গাইডলাইনস ম্যামোগ্রাম

চল্লিশোর্ধ বয়সী মহিলাদের প্রতি বছর একবার ম্যামোগ্রাম করানো উচিত। যদিও ম্যামোগ্রাম কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সার নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয় তবুও স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ে এটা একটা খুব ভাল পদ্ধতি।

ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সামিনেশন

২০-৪০ বছর বয়সী মেয়েদের প্রতি ৩ বছরে একবার কোনো অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গিয়ে স্তন পরীক্ষা করানো উচিত এবং চল্লিশোর্ধ বয়সী মহিলাদের প্রতি বছর এই পরীক্ষা করানো উচিত।

ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন

২০ বছর বয়স থেকে মেয়েদের নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা শুরু করা উচিত। এর উপকারিতা এবং সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধেও জানা উচিত। ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন করার সঠিক পদ্ধতি কোনো ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।

স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা

লোকাল চিকিৎসার উদ্দেশ্য হলো শরীরের অন্যান্য জায়গা বাদ দিয়ে শুধু টিউমার যেখানে হয়েছে সে জায়গায় চিকিৎসা করা। যেমন সার্জারি এবং রেডিয়েশন থেরাপী।

সিস্টেমিক চিকিৎসায় সমস্ত শরীরের চিকিৎসা দেওয়া হয় রক্তনালীর মাধ্যমে অথবা মুখে যাতে শরীরে ছড়িয়ে যাওয়া ক্যান্সার কোষে চিকিৎসা পৌছায়। কেমোথেরাপী, হরমোন, টার্গেটেড থেরাপী এই ধরনের চিকিৎসার আওতায় পড়ে।

সার্জারি

স্তরের টিউমার সরানোর জন্য বেশির ভাগ মহিলাদেরই কোনো না কোনো ধরনের সার্জারির প্রয়োজন হয়। সার্জারির উদ্দেশ্য হলো যতটা সম্ভব ক্যান্সার টিস্যু কেটে বাদ দেওয়া।

ফলোআপ কেয়ার

স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা শেষ হলে স্বস্তি বোধ হয় তবে ক্যান্সার আবার ফিরে আসার দুঃশ্চিন্তাটা থাকে। চিকিৎসা শেষ হয়ে গেলে নিয়মিত ফলোআপ ভিজিটে আসা উচিত। এই সব ভিজিটে ডাক্তার কোনো উপসর্গ আছে কিনা জানতে চাইবেন, শারীরিক পরীক্ষা করবেন এবং প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, ম্যামোগ্রাম, সিটি স্ক্যান করতে উপদেশ দিবেন। ক্যান্সার ফিরে এসেছে কিনা বা ছড়িয়ে গেছে কিনা তা জানার জন্য ফলোআপ প্রয়োজন। প্রথম দিকে এই ভিজিটগুলো ৩-৪ মাস অন্তর হয়ে থাকে। তারপর রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে ফলোআপ এর সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যান্সার সনাক্ত হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিরাময় সম্ভব। সুতরাং স্তন ক্যান্সার মানেই নিশ্চিত মৃত্যু নয়।

@@@@@@@@@@@@@@@@@@@
ডাঃ পারভীন আক্তার বানু
সিনিয়র কনসালট্যান্ট
রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগ
ডেলটা হাসপাতাল লিমিটেড

No comments: